সম্পাদকঃ নবশিখা।
ঊদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নি:শেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই…’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানুষের জন্য নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। নতুন বাংলাদেশে যার যার জায়গা থেকে প্রতিটি মানুষ নিজেকে শুদ্ধ করলে আর সভ্য হলেই মুগ্ধর স্বপ্নগুলো বেচেঁ থাকবে বলে প্রত্যাশা তার আপনজনের।
গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে ‘পানি লাগবে পানি’ ধ্বনিটি মনে আছে? বিশাল এক শূন্যতার মাঝেও যেন আজও বার বার প্রতিধ্বনিত্ব হচ্ছে একটি বাক্য-‘পানি লাগবে পানি’। কী জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে তার সেই বাণীটি!
গণ-অভ্যুত্থানের এই গল্পে চরিত্রের নাম মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন তিনি। বীরের বেশে মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন তারুণ্যের প্রতীক মুগ্ধ। রাজনীতির কোনো লেনদেন ছিল না তার সাথে। অথচ আছে শুধু মানবিকতার গল্প। স্লোগান মুখর উত্তালক্ষণে কিংবা প্রতিরোধের দিনে তিনি সারথী হয়েছেন সাহসের বাতিঘর হয়ে।
ছাত্র-জনতার জীবন বলিদানের গল্পে বীর মুগ্ধ উৎসাহ আর অনুপ্রেরণার এক নাম। তারই শূন্য চেয়ারটার পাশে বসে ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নে আসা যাওয়া করা মুগ্ধর গল্প শোনালেন ভাই মীর মাহবুবর রহমান স্নিগ্ধ। যমুনা টেলিভিশনকে স্নিগ্ধ বলেন, মনে হয় একসাথে ঘুমিয়েছি হঠাৎ করে সে পাশ থেকে গায়েব হয়ে গেছে। তাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। এমন স্বপ্নও প্রতিরাতে দেখি। এরপর ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি আসলেই ও নেই।
কত কত স্মৃতি আন্দোলিত করে চলেছে স্নিগ্ধর মস্তিষ্ককে। সেসব তুলে ধরে বলেন, কতশত স্মৃতি তাকে নিয়ে। একসাথে কত ঘুরতে বের হয়েছি। সে আমার ভাই ছিল না। ছিল বন্ধু। আমাদের স্বপ্ন ছিল, দুজন মোটরসাইকেলে করে ৬৪টি জেলা ঘুরবো।
স্নিগ্ধর দৃঢ় উচ্চারণে বেঁচে থাকবে মুগ্ধর স্বপ্ন। বলেন, মুগ্ধর যে স্বপ্নগুলো ছিল, সেগুলোই এখন আমার স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই।
মুগ্ধ যখন এক বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আশা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছিল, ছোট্টবেলার বন্ধু নাঈমুর রহমান আশিক আপ্রাণ চেষ্টা করছিল তাকে বাঁচানোর। আশিক সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, মুগ্ধ যেখানে আহত হয় সেখানেই আমি ছিলাম। গুলি লেগে যখন সে পড়ে যাচ্ছিল তখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল মুগ্ধ। দেখি, তার কপালে গুলি, সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
সাহসী বীর মুগ্ধ তুখোড় ছিলেন, যিনি নিমিষে মিশে যেতেন সাধারণে। তবে কেমন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল মুগ্ধ? এ বিষয়ে তার বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, মানুষ মানুষকে সহযোগিতা করা, সভ্য হওয়া এটি ছিল তার চিন্তার বিষয়। এই বিষয়গুলো আমরা করতে পারলেই হবে মুগ্ধর প্রতি সম্মান জানানো।
দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন মুগ্ধ। শিখিয়ে গেছেন মানবিক হওয়ার মূলমন্ত্র আর রেখে গেছেন মুগ্ধতা।