গাজায় গণহত্যা বন্ধ করা, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করার দাবিতে ঢাকায় গণমিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩১ মে) বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে এ মিছিল বের করা হয়।
গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, আজ বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার ঘৃণ্য পাঁয়তারা শুরু করেছে। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। ইসরায়েলসহ তার দোসরদের পণ্য বর্জনের আহ্বান করছি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, ছাত্রনেতা নূরুল বশর আজিজী, ডা. শহিদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ মুফতি ফরিদুল ইসলাম, আলামিন সোহাগ এবং ঢাকা উত্তরের সভাপতি হাফিজুল হক ফাইয়াজ। সঞ্চালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নেছার উদ্দিন, যুব আন্দোলন সভাপতি যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন ও মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আজকের গণমিছিল ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব সময় সোচ্চার থাকে। আজ ফিলিস্তিনের মা-বোনদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করা হচ্ছে। অথচ, আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেই আমেরিকা মুখরোচকভাবে তাদের মানবতার গল্প শোনায়। জালেম ইসরায়েল যেভাবে আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, তার পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে আমেরিকা।
তিনি বলেন, আমেরিকার মদদেই ইসরায়েল অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। বর্তমান সরকার ফিলিস্তিনের জন্য অনেক মায়াকান্না করে, অথচ এরাই পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরাইল তুলে দিয়ে তলে তলে ইসরায়েলের সাথে সখ্য করছে। এমন মোনাফেকি আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী সরকারের কাজ দেখে আমাদের হাসি আসে। যেসব সিনিয়র অফিসার তাদের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, তাদের দুর্নীতির খবর সামনে আসার পর সরকার বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে জনগণকে বুঝ দিয়ে রাখছে। সরকার কি জানে না, যারা দুর্নীতিবাজ, তারা সব সময়ই দুর্নীতিবাজ।
বাদ জুমা গণমিছিল হওয়ার কথা থাকলেও জুমার আগেই বায়তুল মোকাররম এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল মোড়, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ফিলিস্তিনে নারী-শিশু ও সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েল আগ্রাসন ও নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।’ তিনি কুরআনে আল্লাহর নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এখন আর বসে থাকার সময় নেই।
মাওলানা মাদানী মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনারা ইসরায়েলে তেল-গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেন। অন্যথায়, মুসলিম বিশ্ব আপনাদের ছেড়ে দেবে না।’ ইরানে ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুকে ইসরায়েলের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেন মাওলানা মাদানী।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, আমরা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। ইসরায়েল জোর করে, হত্যা, খুন, ধর্ষণ করে সেখানে অরজাকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভুঁইফোর একটা রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল হত্যাযজ্ঞের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদেরকে অন্যায়ভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে আমেরিকা।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলমান জাতি কখনোই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই না। প্রয়োজনে সংগ্রাম, লড়াই ও জিহাদের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করব, ইনশাআল্লাহ।’ তিনি দেশবাসীকে ইসরায়েলি এবং তাদের সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জনের আহবান জানান।
মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান এবং ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে ধিক্কার জানান। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আর চুপ থাকতে পারি না।