সহ-সম্পাদকঃ জুলফিকার।
খেলোয়াড়ি জীবনে খালেদ মাসুদ পাইলট সাক্ষী হয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের একদম শুরুর দিনগুলোর। দারুণ একটা ক্যারিয়ার শেষে জড়িয়েছেন কোচিং পেশায়। সংগঠক হিসেবেও রয়েছে বেশ খ্যাতি। স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই তাকে দেখতে চেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। কারণটা কী? জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, একটা সিন্ডিকেটের কারণেই তার পক্ষে বিসিবিতে চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়নি।
টি-স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন এতদিন বিসিবিতে তাকে কোনো পদে দেখা যায়নি। এর জবাবে অকপটে তিনি জানিয়েছেন এর পেছনের কারণ। “ক্রিকেট বোর্ডে যাওয়ার জন্য আমি চেষ্টা করেছিলাম। গত নির্বাচনে আমি চেষ্টা করেছিলাম। আমার খুব স্বপ্ন ছিল যে অবসরের পর আমরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাইনি, সেগুলো ডেভেলপ করবো। আমি গত নির্বাচনে চেষ্টা করেছি সেখানে পলিসি মেকিংয়ের জায়গায় যেতে। তবে যেহেতু সেখানে প্যানেলে না যেতে পারলে, কিছু দল না করলে আপনি যেতে পারবেন না। আমি রাজশাহী বিভাগ থেকে পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, যাতে রাজশাহীর ক্রিকেটকে কীভাবে উন্নত করা যায়। তাই আমি দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম সেখানে ৯টা ভোটের মধ্যে ৭টা ভোটই বিক্রি হয়ে যায়। বিসিবির শীর্ষ মহল থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছিল যে পাইলটকে যেন একটা ভোটও না দেওয়া হয়। আমি বলব তারা কিন্তু ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আসেনি। তারা এমন লোকেদেরই চেয়েছে যারা শুধু সবকিছুতে সম্মতি জানাবে। আর শুধু চেয়ারে বসে থাকবে।
বিসিবির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের মধ্যে একটি শীর্ষ অভিযোগ ছিল একটাই, তা হল এখানে ক্রিকেটের বাইরের ব্যক্তিদের প্রাধান্য বেশি। সাবেক ক্রিকেটার বা ক্রিকেটের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্টদের পেছনে ফেলে পরিচালক হিসেবে বোর্ডে জায়গা পেয়েছেন ব্যবসায়ী বা অন্য সেক্টরের ব্যক্তিরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট বা ক্রিকেটারদের উন্নতির জন্য করনীয় কাজটা তারা সেভাবে ধরতে পারেননি। ফলে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির এত বছর পরও বাংলাদেশ এখনও পরাশক্তি হতে পারেনি।
পাইলট বলেছেন, নিয়মটাই এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে ক্রিকেটের মানুষরা যাতে বোর্ডে না আসতে পারেন।
কোনো খেলোয়াড় বা স্কিলড লোক কেউ যদি ক্রিকেট বোর্ডে আসতে চায়, তারা কিন্তু আসতে পারবে না। কিন্তু তারা তো এত হাজার কোটি টাকার মালিক না। তারা শুধু ক্রিকেট খেলেছে। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেট বোর্ডে এমন গঠনতন্ত্র থাকা উচিত, যাতে এই ধরণের লোক যারা টাকা থাকলেই সেখানে যেতে পারবে না। তার কিছু যোগ্যতাও থাকতে হবে। আবার এটাও ঠিক, কিছু ব্যবসায়ী লোকও দরকার আছে, কারণ এখানে একটা বাণিজ্যিক মূল্যও আছে। ব্যবসায়িকভাবে যাদের ভালো সুনাম আছে, যারা ক্রিকেটের যখন খুব খারাপ অবস্থা ছিল, তখন থেকে স্পন্সর করে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।”
জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট গত সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে অনান্য ক্ষেত্রের মত তীব্র চাপের মুখে পড়ে বিসিবিও। কারণ, বছরের পর বছর ধরে এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। নানা দুর্নীতির বিপক্ষে মুখ খুলছেন কোচ-খেলোয়াড়রা। গুঞ্জন রয়েছে, বড় একটা পরিবর্তন আসছে বিসিবি এবং তাতে এখানে হয়ত থাকবেন না আগের বোর্ডের অধিকাংশ পরিচালকই। পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।