সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা ছড়ানো এমন ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়ে দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৫০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও বাকিগুলো পেজ। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর মোট প্রায় ৩৪ লাখ ফলোয়ার রয়েছে।
Google news
শনিবার (১ জুন) মেটা’র চলতি বছরের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের সূত্রে বিবিসি বাংলা এসব তথ্য জানিয়েছে।
মেটা দ্বারা পরিচালিত অনুসন্ধানের উপর তৈরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো এই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর সাথে বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এ ধরনের তৎপরতার পেছনে যারা আছে, তাদের কয়েকজনকে অনুসন্ধানের আগেই অটোমেটেড সিস্টেমেই চিহ্নিত করে অকার্যকর করা হয়েছে।
এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর নেটওয়ার্ক ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রাম ও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বলে মেটা’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই নেটওয়ার্ক প্রাথমিকভাবে বাংলাতেই কনটেন্ট পোস্ট করতো। তবে নিউজ ও বাংলাদেশের চলতি ঘটনাবলী ইংরেজিতেও প্রকাশ করা হতো। এসব ঘটনাবলীর মধ্যে ছিল নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং নির্বাচন পূর্ব সহিংসতায় দলটির ভূমিকা, বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দলটির ভূমিকা।
প্রতিবেদনে মেটা বলেছে, ‘আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফল হিসেবে এসব সন্দেহজনক ও অনির্ভরযোগ্য অতিরিক্ত তৎপরতা দেখতে পেয়েছি, যা গত বছর আমরা সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণের একটি নেটওয়ার্ক উন্মোচন করতে পেরেছি।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘যদিও এগুলোর পেছনে থাকা ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় ও নিজেদের মধ্যকার সমন্বয়ের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যে যারা এগুলোর সাথে জড়িত তাদের সাথে আওয়ামী লীগ ও অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন এর যোগসূত্র রয়েছে।’
এদিকে রিপোর্টে যেসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের কথা বলা হয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ও একপেশে রিপোর্ট। যাদের মাধ্যমে ফেসবুক তদন্ত করেছে বা তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত করা উচিত। এটি ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আশা করিনি।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছর আগস্টে মেটা’র কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলো। তখন মেটা বলেছিলো, গুজব ঠেকাতে সারাবিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে তারা।
পরবর্তীতে মেটা জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মের নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনেকে কনটেন্ট তৈরি করে থাকে, যে বিষয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে যেন এমন প্রচারণা প্রতিহত করা হয় সেই জন্য আরও কড়া নিয়ম নিয়ে আসবে মেটা।