সম্পাদকঃ জয় আরিফ।
আজ রাতে ডিবি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়কারী ভিডিও বার্তায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন এবং লিখিত বার্তায় ৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষর ছিল। সমন্বয়কারীদের লিখিত বার্তাটি হুবহু তুলে ধরলাম। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ সহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবী জানাচ্ছি। আমাদের প্রধান দাবী ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছেন। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহবান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মূর্হত থেকে আমাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করছি।
এর আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কারীদের ডিবি প্রধানের সাথে রাতের খাবার খেতে ও দেখা যায়,এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভিডিওতে এই ৬ জন সমন্বয়কে দেখা যায়, ১। মোঃ নাহিদ ইসলাম, ২। মোঃ আরব্বিল আলম,৩। হাসনাত আব্দুল্লাহ ,৪। মোঃ আবু বাকের মজুমদার, ৫। আসিফ মাহমুদ ৬। নুসরাত তাবাসসুম।
প্রসঙ্গ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ৮ জুলাই সংগঠনটির পরিচালনায় তৈরি করা হয় ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম। সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ কলেজ এবং সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই সমন্বয়ক টিমে। তবে আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি থাকে তিনজনের কাছে, যারা গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামের একটি সংগঠনের শীর্ষ পদধারী। ওই তিন সমন্বয়ক হলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদার। তারা প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সূত্র বলছে, শুরু থেকেই ছাত্রশক্তি চেয়েছিল শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকে সরকার পতনের দিকে নিতে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের পাশাপাশি শুরুতে আন্দোলনে রসদ জুগিয়েছেন ইনসাফ কায়েম কমিটি এবং এবি পার্টির নেতারা।
জানা গেছে, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির’ সঙ্গে সম্পৃক্ত এই তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে তাদের নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন। সাধারণ ছাত্র এবং নিরপেক্ষ সমন্বয়করা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও তারা নেতৃত্বে থেকে আন্দোলনটিকে দীর্ঘায়িত করা এবং সরকার পতনের উদ্দেশ্যে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তাদের প্ররোচনায়ই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সংঘর্ষটি এভাবেই শুরু হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ সমন্বয়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিরোধী ছিলেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের শুরুতে এই তিন সমন্বয়ক বিভিন্ন সময়ে বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন। এ ছাড়া জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয় এসব নেতার। তাদের প্ররোচনায় টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় সরকার পতন।
সূত্র বলছে, অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলমকে আন্দোলনের শুরুতে ১৪, ১৫ এবং ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া এই তিন দিন তাকে সমন্বয়কদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করতে দেখা গেছে। এর বাইরে শাহবাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় সব কর্মসূচিতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। যদিও ওই সময়ে তিনি ক্যামেরা হাতে ছবি তুলছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে।
সূত্রের দাবি, গণঅধিকার পরিষদ থেকে ভেঙে ছাত্রশক্তির প্রতিষ্ঠা হলেও সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতাদের সঙ্গে। এবি পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ছাত্রশক্তির সঙ্গে নীতিগতভাবে ঐক্যমতে পৌঁছেছিল এবি পার্টি। সংগঠনটি এবি পার্টির ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করার কথা ছিল।
জানা যায়, আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে এবি পার্টি শিক্ষার্থীদের জন্যে আইনি সহায়তায় আলাদা সেলও গঠন করে। দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের এই টিম গঠন করা হয়। এর বাইরে সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নির্দেশনায়ও পরিচালিত হন তারা।
আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সরকার কোটা সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এতে সরকার পতন এবং আন্দোলন দীর্ঘায়িত করার আর কোনো উপায় না দেখে তারা ৮ ও ৯ দফা দাবি পেশ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুরু থেকেই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দেশ এবং দেশের বাইরে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও আসিফ, বাকের ও নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তবে বেশিরভাগ সমন্বয়ক এর বিরোধিতা করেছেন।
সূত্রঃ কালবেলা